প্রতিনিধি ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৯:২২:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ
সিলেট বাংলাদেশের ইসলামী ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, যেখানে একাধিক পবিত্র মাজার শরীফ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল হজরত শাহ জালাল (রহ.)-এর মাজার, যা সিলেটের ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক পরিচয়ের প্রধান প্রতীক। ১৩শ শতকে হজরত শাহ জালাল (রহ.) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে সিলেটে আগমন করেন। তার প্রচেষ্টা এবং কীর্তির ফলে সিলেটে ইসলামিক সংস্কৃতি গভীরভাবে প্রোথিত হয়।
এই মাজারটি মুসলিম ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের জন্য একটি পবিত্র স্থান এবং প্রতিবছর হাজারো মানুষ এখানে প্রার্থনার জন্য আসে। শাহজালাল মাজারের পাশেই রয়েছে হজরত শাহ পরাণ (রহ.)-এর মাজার, যিনি শাহ জালালের ভাতিজা এবং সিলেটে ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সিলেটের মাজার শরীফগুলোর স্থাপত্যশৈলী, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং আধ্যাত্মিক পরিবেশ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি অমূল্য অংশ। এসব মাজার ইসলামী ধর্মের শান্তি, সহমর্মিতা ও মানবিকতার বার্তা প্রচারে যুগ যুগ ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
বগুড়ার মহাস্থানগড় বাংলাদেশের ইতিহাস ও পুরাকীর্তির জগতে এক অনন্য স্থান। এটি দেশের প্রাচীনতম শহরের নিদর্শন এবং প্রাচীন পুণ্ড্র রাজ্যের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে নির্মিত এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক মোর্য সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত বলে ধারণা করা হয়।
মহাস্থানগড়ে রয়েছে প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, মাজার, মন্দির এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গোকুল মেধের স্তূপ, বেহুলা-লখিন্দরের বাসস্থান, এবং জিয়ৎ কুণ্ড। এখান থেকে পাওয়া বিভিন্ন প্রত্নবস্তু যেমন পাথরের ফলক, ব্রোঞ্জের মূর্তি, এবং মুদ্রা বাংলার প্রাচীন সভ্যতার সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষী।
মহাস্থানগড় শুধু ইতিহাসেরই নয়, এটি ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যেরও এক অনন্য কেন্দ্র। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মহাস্থানগড় আজও পর্যটকদের মুগ্ধ করে চলেছে এবং দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জাগ্রত করে।
রাজশাহীর দুর্গ বাংলার ঐতিহাসিক স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন। এটি মধ্যযুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, যা মুঘল স্থাপত্য শৈলীর প্রভাব বহন করে। দুর্গটি রাজশাহীর স্নিগ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত এবং এর চারপাশে নদীর দৃশ্য সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই দুর্গের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর সুদৃঢ় দেয়াল, প্রশস্ত প্রবেশদ্বার, এবং স্থাপত্যশৈলীর নিখুঁত নকশা। প্রাচীন এই দুর্গ প্রতিরক্ষা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হতো। ভেতরে রয়েছে কয়েকটি মসজিদ, জলাধার এবং বসতি, যা সেই সময়ের জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি।
রাজশাহীর দুর্গ ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এটি কেবল ইতিহাসপ্রেমীদের আকর্ষণ করে না, বরং পর্যটকদেরও মুগ্ধ করে। দুর্গটি আমাদের ঐতিহ্য এবং প্রাচীন বাংলার স্থাপত্যকলার এক চিরস্মরণীয় নিদর্শন।