বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থান ও দর্শনীয় স্থান অংশ-০৬

  প্রতিনিধি ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১১:১৯:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান: ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি।

বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির দেশ। এর প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে আছে নান্দনিক প্রকৃতি এবং ইতিহাসের চিহ্ন। বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলো শুধু স্থানীয় নয়, আন্তর্জাতিক পর্যটকদেরও আকর্ষণ করে।

১৮,পুরান ঢাকা পুরনো শহরের রূপ ও ঐতিহ্য।

পুরান ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী অংশ, যা শহরের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যশৈলীর এক জীবন্ত নিদর্শন। মুঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত এই অঞ্চলটি ছিল রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র।

পুরান ঢাকার রাস্তাঘাট, অলিগলি, এবং স্থাপত্যে পুরনো ঢাকার অনন্য রূপ ফুটে ওঠে। এখানে বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে লালবাগ কেল্লা, হোসেনী দালান, তারকেশ্বর মন্দির, এবং আরমানিটোলা জমিদার বাড়ি। এগুলো শুধু ঐতিহাসিক স্থাপনা নয়, বরং মুঘল ও ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্যশৈলীর মূল্যবান নিদর্শন।

পুরান ঢাকার খাবারের খ্যাতিও সুবিদিত। বিখ্যাত বাকরখানি, কাচ্চি বিরিয়ানি, এবং মোগলাই পরোটা এখানকার ঐতিহ্যবাহী রান্নার অংশ। এছাড়া, ঈদ, পূজা এবং অন্যান্য উৎসব উপলক্ষে এখানকার প্রাণবন্ত পরিবেশ সত্যিই মুগ্ধকর।

পুরান ঢাকা তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মাধ্যমে কেবল ঢাকার নয়, পুরো বাংলাদেশের ঐতিহ্যের ধারক হয়ে আছে। এটি অতীত ও বর্তমানের এক সুন্দর মেলবন্ধন।

১৯,কুয়াকাটা: বঙ্গোপসাগরের রূপালি ঐতিহাসিক সৈকত।

কুয়াকাটা, বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত একটি মনোরম সমুদ্র সৈকত, যা বঙ্গোপসাগরের রূপালি সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য প্রসিদ্ধ। এটি দেশের একমাত্র সৈকত, যেখানে একই স্থান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়।

কুয়াকাটা নামটি এসেছে “কূপ কাটার” থেকে, যা আরাকান থেকে আগত রাখাইন জনগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক কর্মের স্মৃতি বহন করে। তারা এখানে কূপ খনন করে মিষ্টি পানির উৎস তৈরি করেছিল। সেই থেকে এই এলাকার নাম হয়েছে কুয়াকাটা।

২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকতটি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বরং সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যেরও একটি উদাহরণ। কুয়াকাটার কাছেই রয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের পল্লি এবং বৌদ্ধ মন্দির, যা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। এছাড়া, ফাতরার বন এবং সোনার চরের প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করে।

কুয়াকাটা তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য এবং প্রাচীন ইতিহাসের সমন্বয়ে পর্যটকদের জন্য এক অনন্য গন্তব্য। এটি বঙ্গোপসাগরের রূপালি ধারা ও ঐতিহ্যের এক চিরন্তন প্রতীক।

২০,শ্রীমঙ্গল: চা-বাগানের শান্ত পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার জেলার এক মনোরম স্থান, যা বাংলাদেশের “চায়ের রাজধানী” নামে পরিচিত। অসংখ্য সবুজ চা-বাগান, পাহাড়ি দৃশ্য এবং শান্ত পরিবেশ শ্রীমঙ্গলকে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করেছে।

শ্রীমঙ্গলের চা-বাগানগুলোতে সবুজের বিস্তৃতি এবং ঘন-গাছের সারি যেন প্রকৃতির এক নান্দনিক চিত্রকলা। এখানকার বিখ্যাত সাত রঙের চা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। চা-বাগান ছাড়াও এখানে রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বনজীবী, এবং উদ্ভিদ দেখা যায়।

এছাড়া, শ্রীমঙ্গলের কাছেই রয়েছে হাইল হাওর এবং বাইকারি ঝর্ণা, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অতুলনীয়। এখানকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং মৃদুমন্দ বাতাস মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।

শ্রীমঙ্গল শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং চা-শিল্পের ঐতিহ্য ও স্থানীয় সংস্কৃতির অনন্য মেলবন্ধন। এটি প্রকৃতিপ্রেমী এবং শান্তিপ্রিয় মানুষদের জন্য এক আবশ্যক গন্তব্য।

 

আরও খবর

Sponsered content